মিরিক ভ্রমণ-

মিরিক (Mirik) ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত ছবির মত সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পাহাড়ের সবচেয়ে জনবহুল পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অন্যতম হল এই মিরিক লেক। পাহাড়, বনবীথি আর ঝিল – এই তিনের সঙ্গমে মিরিক হয়ে উঠেছে জমজমাট পর্যটন কেন্দ্র। রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন এই পার্বত্য শহর মিরিক সৌন্দর্য্যের প্রেক্ষিতেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা চা বাগান, সবুজ বণানী এবং মেঘের স্পর্শ এই স্থানকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। উঁচু-নিচু পাহাড়ের ঢাল আর সেই পাহাড়ের ঢালে নামজাদা কোম্পানির চা বাগান। আর শীতের মরসুমে এ দিক ও দিক তাকালেই চোখে পড়বে কমলালেবুর গাছ। গাছগুলো থেকে যেন কমলা আভা ঠিকরে বেরোচ্ছে! ৫,৮০০ ফুট উচ্চতার এই পাহাড়ি শহরের বুক চিতিয়ে শুয়ে আছে সুমেন্দু হ্রদ। সুদীর্ঘ পাইনের বনানী আর তার ছায়া এসে পড়ে লেকের টলটলে জলে। দেখে মনে হবে যেন একটা মায়াঘেরা জায়গা।

চারদিকে ঘিরে আছে বিখ্যাত সব চা বাগান – সৌরিনী, থুর্বো, গোপালধারা, ফুগুরি। মনের প্রশান্তি চাইলে কিছুক্ষণ বসতে পারেন তিব্বতি বৌদ্ধ মঠ বোকার গুম্ফায়। পাইনের ঘন অরণ্যে গেলে ইচ্ছে করবে রহস্যময়ী প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যেতে। রামিতে দারা ভিউ পয়েন্ট থেকে চোখে পড়বে রাজকীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। আরও বেশ কিছু ভিউ পয়েন্ট রয়েছে, যেগুলো থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অপরূপ শোভা চাক্ষুষ করতে পারবেন।

কয়েক বছর আগে পর্যটকরা কেবল দার্জিলিং যাওয়ার পথেই ঢুঁ মারতেন হ্রদের শহর মিরিকে। মায়াবী প্রকৃতি,  সুস্বাদু খাবার দাবার সবই উপভোগ করার মতো। কিন্তু রাতে থাকতেন না। এখন অবশ্য সুমেন্দু হ্রদে নৌকোবিহার পরিস্থিতি বদলেছে।

অবস্থিতি

মিরিক কথাটি এসেছে মির-ইয়ক থেকে এসেছে। এর অর্থ আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থান। সমুদ্রতল থেকে প্রায় ১৭৬৭ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মিরিকের দূরত্ব দার্জিলিংয়ের থেকে ৪৯ কিলোমিটার। ঘুম এবং কার্শিয়াং থেকে যথাক্রমে ৪১ ও ৪৬ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত রাজ্যের অন্যতম সেরা শৈলশহর।

মিরিক এর দর্শনীয় স্থান

টিংলিং ভিউ পয়েন্ট

মিরিক শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত টিংলিং ভিউ পয়েন্ট থেকে দার্জিলিং জেলার সবকটি চা বাগানের দর্শন মেলে একসঙ্গে।

দেওসি ডারা

সমুদ্রতল থেকে ১৭৬৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই স্থান থেকে মিরিক শহর এবং তার আশেপাশের পাহাড়ের শোভা পরিলক্ষিত হয়।

মিরিক লেক

মিরিক শহরের অন্যতম আকর্ষণ এই লেকের দৈর্ঘ্য প্রায় ১.২৫ কিলোমিটার। ওক, মাপলে গাছ দিয়ে ঘেরা এই জলাশয়ে বোটিং করতে আসেন বহু পর্যটক। লেকের অদূরে ঘোড়সওয়ারির ব্যবস্থা রয়েছে।

রামিতে ডারা

এটি একটি পাহাড়। যার সর্বোচ্চ স্থান থেকে বরফাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য্য অনুভব করা যায়।

মিরিক চা বাগান

মিরিক লেক থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই স্থানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে আটটি চা বাগান। দার্জিলিং জেলার অন্যতম সেরা এই চা বাগান পর্যচকদের অবারিত দ্বার।

মিরিকে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু হয় ১৯৬৯ সালে। থুর্বো চা বাগান থেকে ৩৩৫ একর জমি কিনে নেয় পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তর। কয়েক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন উপলব্ধি করতে পারে, বিশ্বমানের ট্যুরিস্ট স্পট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মিরিকে। পর্যটকদের কাছে ছোট্ট এই শহরকে আরও লোভনীয় করে তোলার কাজ চলছে।

কীভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে ট্রেন, বাসে পৌঁছতে হবে শিলিগুড়ি। বিমানে বাগডোগরা পৌঁছতে বেশি সময় লাগে না। শিলিগুড়ি থেকে ৫২ এবং বাগডোগরা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরত্ব অবস্থিত মিরিকে পৌঁছনো যায় সড়ক পথে। সঙ্গী হয় বাস কিংবা প্রাইভেট বা ভাড়া করা গাড়ি। পথিমধ্যে পার্বত্য শোভা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

কোথায় খাবেন

বাঙালী খাবারের জন্য কলকাতা রেস্টোরেন্টে খেতে পারেন। বাঙালী খাবারের জন্য এটাই একমাত্র বাঙালী হোটেল।

কোথায় থাকবেন

আবহাওয়া মনোরম হওয়ায় সব মরসুমেই মিরিকে ঢুঁ মারা যেতে পারে। পর্যটকদের কথা ভেবে এই স্থানে বেশ কয়েকটি হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং হোম স্টে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ